জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং জাতিসংঘের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “সংস্কারের পাশাপাশি আমরা জুলাইয়ে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।”
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়—এটি এমন একটি রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়া, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।”
তিনি স্মরণ করেন, গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ জনগণ—বিশেষত তরুণ সমাজ—অবিচারের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে রুখে দাঁড়িয়েছিল। “এই বিপ্লব ছিল আমাদের জাতির সম্মান ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত,” বলেন ইউনূস।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং গত বছরের জুলাই-আগস্টের অন্ধকার দিনগুলোতেও জাতিসংঘ আমাদের পাশে থেকেছে।”
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। এই সহিংসতা ছিল পূর্বপরিকল্পিত, সুসংগঠিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত—যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ ও প্রমাণভিত্তিক সত্য অনুসন্ধান কেবল বিচার নয়, বরং আত্মশুদ্ধির জন্যও অত্যন্ত জরুরি।” তিনি জানান, এই অনুসন্ধানকে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা যেমন বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনও সমর্থন দিয়েছে।
ইউনূস বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দণ্ডবিধি সংশোধন, গুম প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যোগদান এবং জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার আওতায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও মানবাধিকার হাইকমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তর প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে।”
তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে মানুষ শান্তি, মর্যাদা ও স্বাধীনতার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”
বক্তব্যের শেষাংশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যারা গত বছর নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন—একটি নতুন বাংলাদেশের, যেখানে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”
সূত্র: বাসস